মনোবিজ্ঞানীদের চোখে শিশু হত্যার কারণ

প্রকাশঃ মার্চ ৪, ২০১৬ সময়ঃ ৫:৪৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৪৯ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার

sisu murder

‘আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ’ । তাই তাকে সুস্থভাবে ও সুস্থ মনে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দিতে হবে। এমন রকমারী কথার ফুলঝুড়ি শুনতে পাই হরহামেশা। কিন্তু বাস্তবতা কি বলছে একথা? বিশেষ করে বেশ কিছুদিন যাবৎ যখন শিশু হত্যা-নির্যাতন  আশংকাজনকহারে বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন মায়ের হাতে দুই সন্তান হত্যার মতো বর্বরতম নৃশংস ঘটনা। ইদানিং শিশুদের উপর ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনার পর্যালোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে, আপন-পর কারও হাতেই এখন আর শিশুরা নিরাপদ থাকছে না।

বর্তমানে ঘরের ভেতরের যে সমস্যাগুলো প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হল,  মা অথবা বাবার পরকীয়া, পারিবারিক অশান্তি, ভবিষ্যৎ দু:চিন্তা, দীর্ঘদিনের অপ্রাপ্তি থেকে মানসিক অসুস্থতা, ক্ষণিকের আবেগ। এছাড়া ঘরের বাইরে শিশুরা  মূলত নির্যাতিত হচ্ছে :  সম্পত্তির বিরোধ, আর্থিক অসচ্ছলতা, নৈতিক অধ:পতন, ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভ থেকে। বিষয়গুলো নিয়ে সব মহলে এখন গভীরভাবে চিন্তাভাবনা চলছে। আর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে কিছু কঠিন প্রশ্ন। শিশু নির্যাতনের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনের মূল কারণটা কী হতে পারে? শিশুরাই কেন অন্যের আবেগের বলি হচ্ছে? তাহলে কি আপনজনদের হাতেও শিশুরা আর নিরাপদ নয়?   

পরিসংখ্যান বলছে, গত দুই বছরে বাবা-মায়ের হাতে খুন হয়েছে অন্তত ৯০ শিশু। এই স্পর্শকাতর হত্যাকাণ্ডের জন্য দুর্বল পারবিারিক বন্ধন, বৈবাহিক সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয়কে চিহ্নিত করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, রাজধানী বনশ্রীতে মায়ের হাতে দুইশিশু হত্যার সাম্প্রতিক ঘটনা সামাজিক মূল্যবোধের অবনতিরই চিত্র। 

শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী এ বছর এখনও পর্যন্ত খুন হয়েছে ৫৬ শিশু। এরমধ্যে বাবা-মায়ের হাতে খুন হয়েছে ৯ শিশু। ২০১৫ তে বাবা কিংবা মা খুন করেছে ৪০ শিশুকে। ২০১৪ তে ৪১ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। 

এসব অস্বাভাবি হত্যাকাণ্ডকে ব্যা্খ্যা করতে গিয়ে  মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের আন্ত সম্পর্কের মাত্রা তলানীতে চলে যাচ্ছে। ভোগবাদী সংস্কৃতির কারণে টাকার পেছনে ছুটছে অনেকেই। ফলে ভেঙে পড়ছে পারবিারিক ও সামাজিক দায় দায়িত্ব, মূল্যবোধ। 

sisu murder-1

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, ‘নানাভাবে নানা  করণে আমাদের অন্যায় কার্যক্রম বেড়ে গেছে। তারই একটা প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি শিশুহত্যা বৃদ্ধিতে। শিশুরা যেহেতেু সবচেয়ে দুর্বল, সেই বিষয়টির অপব্যবহার করছেন অনেকেই। আমাদের নেতিবাচক মনোবৃত্তিটি যখন আমরা দূর করার চেষ্টা করি তখন স্বাভাবিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শক্তিকেই আমরা বেছে নেব; যে প্রতিরোধ করতে পারবে না’। 

আরেক মনোবিজ্ঞানী রুমা খন্দকার বলেন, ‘আমার নিজের ভালো থাকাকে আমি যদি মনে করি শুধু ভালো ভালো ড্রেস পড়া, ভালো ভালো পার্লারে গিয়ে সেজে আসা, অবৈধ কোনো সম্পর্কে জড়ানো; বিষয়টি কিন্তু তা না ’।

দুইশিশু হত্যাকাণ্ড ঘটনায় মা জেসমিন বলেন, ভবিষ্যৎ দু:চিন্তা থেকে তিনি তার সন্তানদের হত্যা করেছেন। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে এসে দাঁড়ায়, শুধু দু:চিন্তা থেকেই কি কোনো মা তার সন্তানকে হত্যা করতে পারেন? 

এ বিষয়টি মনোবিজ্ঞানী রুমা খন্দকাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি মোটেও একমত নন বলে জানান এবং এও বলেন যে, ‘শুধু  হতাশা থেকে হত্যা করেছে এটা সঠিক নয় বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি দেখতে হবে, উনাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কটি কেমন ’। 

মনোবিদ মেখলা সরকার আরও বলেন, ‘অন্যান্য ধরণের কোনো ব্যাপার আছে কিনা তাও দেখতে হবে। আমাদের ব্যক্তিত্বের যে গঠন সেক্ষেত্রে নানারকমের চাপ থাকে; সে চাপটি মোকিাবেলা করার মতো মানসিক দক্ষতা সবার সমানভাবে থাকে না ’। 

এ ধরণের সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের নিয়ে আচরণ, নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্ব গঠনের ওপর ট্রেনিং থাকার প্রয়োজন বলে মনে করছেন মনোবিজ্ঞানীরা। 

সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট টিভি

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G